মরক্কোর মারাকেশে ২০ই মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এইবারের এসিএম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল। এবারের প্রতিযোগিতায় সারাবিশ্বের ১২৮টি দল অংশ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের দুটি দল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের JU Assassins এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের SUST DownToTheWire ইতোমধ্যেই মরক্কোতে গিয়ে পৌছেছে। SUST DownToTheWire এর সদস্যরা হচ্ছেন ধণঞ্জয় বিশ্বাস, সাকিবুল মাওলা এবং আবদুল্লাহ আল মারুফ। আর JU Assassins দলে আছেন নাফিস সাদিক, অনিন্দ্য মজুমদার এবং সুমন ভদ্র।
মূলত JU Assassins এর রিজিওনালের অভিজ্ঞতা, ওয়ার্ল্ড ফাইনালের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা নিয়ে থাকছে এবারের আয়োজন।
অমৃতাপুরীর বিজয়
হট ফেভারিট হিসেবে ঢাকা রিজিওনাল শুরু করলেও কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই চতুর্থ হয়ে বসে JU Assassins। অনিন্দ্য মজুমদার বলেন, “ঢাকা রিজিওনালের পর আমরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি। ঢাকায় আমাদের পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল ছিল না”। কিন্ত এরপরই অমৃতাপুরীতে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে তারা। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কনটেস্টে সাতটি সমস্যা সফলভাবে সমাধান করে দ্বিতীয় স্থানের সাথে সাথে ওয়ার্ল্ড ফাইনালের টিকিটও নিশ্চিত করে ফেলে জাহাঙ্গীরনগরের “খুনে” প্রোগ্রামাররা! উল্লেখ্য, অমৃতাপুরী থেকে শীর্ষ চারটি দল ওয়ার্ল্ড ফাইনালে কোয়ালিফাই করতে পারত।
সে সময়ের অনুভূতির কথা জানতে চাওয়া হলে অনিন্দ্য বলেন, “সাতটি সমস্যা সমাধান করেও আমরা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না যে আমরা কোয়ালিফাই করেছি কি না। বিজয়ী দলগুলোর নাম ঘোষণা করার সময় আমরা ভীষণ নার্ভাস ছিলাম। যখন দ্বিতীয় দল হিসেবে আমাদের নাম ঘোষণা করা হল, তখন আমাদের স্বপ্ন সত্যি হল”। বিজয়ের মুহুর্তটির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “এটি ছিল আমাদের জীবনের সব থেকে আনন্দময় মুহুর্তের একটি”।
ওয়ার্ল্ড ফাইনালের প্রস্তুতি
ওয়ার্ল্ড ফাইনালে কোয়ালিফাই করার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় JU Assassins এর প্রস্তুতি। প্রস্তুতি সম্পর্কে নাফিস সাদিক বলেন, “শুরুতে আমরা বিগত ওয়ার্ল্ড ফাইনালগুলোর সমস্যা সমাধান করার সিদ্ধান্ত নেই। প্রতিটা ওয়ার্ল্ড ফাইনালের প্রবলেমগুলোর জন্য আমরা এক সপ্তাহ করে সময় নির্ধারণ করি। সপ্তাহের শুরুতে আমরা কোন একটি ওয়ার্ল্ড ফাইনালের সমস্যাগুলো নিয়ে পাঁচ ঘণ্টার একটি কনটেস্ট করতাম। তারপর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে আমরা যেগুলো সমাধান করতে পারিনি, সেগুলো চেষ্টা করতাম। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের প্রতিটা ওয়ার্ল্ড ফাইনালের অন্তত পাঁচটি করে সমস্যার সমাধান করি আমরা”। অনুশীলনের এই প্রক্রিয়াটি তাদের জন্য যথেষ্ট কার্যকর হয়েছে বলে নাফিস জানান। এছাড়াও প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা অ্যান্ড্রু স্ট্যানকেভিচ এবং কোডকাপের সমস্যা সমাধান করেছেন।
নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে বিশেষ কোন প্রস্তুতি নিয়েছেন কি না জানতে চাওয়া হলে নাফিস বলেন, “শেষের কয়েক সপ্তাহ আমরা জ্যামিতি আর ম্যথের সমস্যা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করেছি”। এছাড়া প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব দুর্বলতা নিয়ে কাজ করেছেন বলে তিনি জানান। নাফিস নিজে খুঁটিনাটি টেকনিক, জ্যামিতি, ইন্টিগ্রেশন এগুলো নিয়ে বেশি কাজ করেছেন।
নেপথ্যে যারা
নাফিস-অনিন্দ্য-সুমন ত্রয়ীর এই অসাধারণ পথচলার নেপথ্যের নায়কদের সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে তারা প্রথমেই বলেন হাসনাইন হেইকেলের নাম। হাসনাইন হেইকেলের যাদুমন্ত্রণার বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে নাফিস বলেন, “জামি ভাই রীতিমত আমাদের প্রোগ্রামিংয়ের অ-আ-ক-খ শিখিয়েছেন। তার কারণেই আমাদের এই অসাধারণ যাত্রা সম্ভব হয়েছে”। অনিন্দ্য বলেন, “জামি ভাই ঠিক কিভাবে যাদুটা করেন সেটা বলা মুশকিল। তবে তার কাছে অনুশীলন করতে কখনোই একটুও বিরক্ত লাগত না। কিভাবে করে যেন তিনি টপিকগুলোকে ক্রমান্বয়ে আরো বেশি আনন্দনায়ক করে তুলতেন। তিনি সম্ভাব্য সব উপায়েই আমাদের সাহায্য করেছেন”।
অবদানের বিচারে একই সাথে আসে JU_Opprottashito এর তিন সদস্য নাজিম, শোভন ও টিটোর কথা। তাদের ব্যাপারে অনিন্দ্য বলেন, “নাফিস ছাড়া আমরা সবাইই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর প্রোগ্রামিং শুরু করি। আমাদের বড় ভাইরাই আমাদের কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং শুরু করেছেন। তারা অনেক পরিশ্রম করে আমাদের জন্য একটি অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন। যেটা আমরা আসার সময় ছিল না”। এছাড়া তারা তাদের বন্ধুদের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রত্যাশা
এবারের ওয়ার্ল্ড ফাইনালের প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সুমন ভদ্র “উত্তর দেওয়া কঠিন” বলে মনে করেন। তবে Assassins দের আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে এর পরের কথাতেই।
অনিন্দ্য বলেন, “আমরা আমাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করব। বাংলাদেশের কোন দল ওয়ার্ল্ড ফাইনালে এখনো চারটির বেশি সমস্যা সমাধান করেনি, তবে আমরা আশাবাদী। আমরা অন্তত শীর্ষ ৩০ এ থাকতে চাই”। তবে তাদের প্রত্যাশা আরো উপরের দিকে থাকবে বলেই তারা আভাস দেন।
আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে চারটায় শুরু হবে কনটেস্ট।